ইউনুস সরকার গঠনের পর বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে। ৮ অগস্ট ইউনূস সরকার গঠিত হওয়ার পরে এই প্রায় চার মাসে ১১ জন শীর্ষস্থানীয় দুষ্কৃতী এবং ১৭৪ জন জঙ্গিকে জেল থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে বিভিন্ন জেল ভেঙে বার করে নেওয়া বন্দিদের মধ্যে অন্তত ৭০০ জন এখনও ধরা পড়েনি। এদের বেশির ভাগই বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য।
ইউনূস ও তাঁর উপদেষ্টারা যখন দাবি করছেন, ভারত ও নানা বিদেশি রাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে অপপ্রচার করছে, সেই সময়ে সরকারি কারাকর্তার দেওয়া এই তথ্য একেবারেই উল্টো কথা বলছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ইসলামি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়া হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাতের পর রাত দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী অভিযান চালিয়ে যে জঙ্গিদের গ্রেফতার করে জেলে ভরতে পেরেছিল, এ ভাবে তাদের মুক্তিতে বাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন র্যাব-এর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্তা। বাংলাদেশ থেকে ফোনে তিনি বলেন, “এই সরকারের আমলে গণতন্ত্রের বদলে সর্ব ক্ষেত্রে মবোক্রেসি গেড়ে বসেছে। ক্ষোভের এতটুকু প্রকাশ ঘটলে খুনের মামলার আসামি করা থেকে পিটিয়ে মারা হতে পারে— এটা মানুষ বুঝছেন। সকলের উপরে আতঙ্ক চেপে বসেছে। এক জন নাগরিক হিসাবে আমিও যেমন আমার নামটুকু প্রকাশ করার ঝুঁকি নিতে পারছি না।”
ব্লগার হত্যার পাণ্ডা আনসারউল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-র শীর্ষ জঙ্গি জসিমুদ্দিন রাহমানিকে ইউনূস সরকার মুক্তি দিয়েছে। সেনা পাহারায় হুডখোলা গাড়িতে হাতমাইকে বক্তৃতা দিতে দিতে রাহমানির জেল থেকে বেরিয়ে আসার ছবি বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করার সাহস দেখিয়েছিল। ইতিমধ্যেই ইউনূস সরকারের রোষে পড়ে সরকারি পরিচয়পত্র এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ হারানো এক সাংবাদিক বলছেন, “অধিকাংশ মিডিয়া এত বড় খবরটি প্রকাশই করেনি সরকারপক্ষ অসন্তুষ্ট হতে পারে ভেবে। ছবি দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।” এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রকাশ্যে এসে মিছিল-সমাবেশ করছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজ়বুত তাহরীর। তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করেছে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর চাঁইয়েরা। সরকারের মধ্যেও এই জঙ্গিদের একাধিক কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও করুণ। গত তিন মাসে ৫০০-র বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। রাহাজানি, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের ঘটনাও নৈমিত্তিক। পুলিশ জানিয়েছে, আন্দোলনের সময়ে তাদের থানা ও অস্ত্রাগার লুট এবং মোতায়েন পুলিশ ও কারারক্ষীদের হাত থেকে ছিনতাই করা হয়েছিল ৫৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং সাড়ে ৬ লক্ষের বেশি গোলাবারুদ। দেড় হাজারের বেশি মারণাস্ত্র ও প্রায় ২ লক্ষ গোলাগুলি এখনও উদ্ধার হয়নি। এর মধ্যে বিশেষ সুরক্ষা বাহিনীর ৩২টি অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্রও রয়েছে। গোয়েন্দাদের খবর, এই বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র দুষ্কৃতীদের হাতে চলে গিয়েছে। জঙ্গি শক্তি তাদের কাছ থেকে এই অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করছে।
কলকাতায় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলছেন, “সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে লাগাম টানা— কোনও কাজেই ইউনূস সরকারের উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছেন না বাংলাদেশের আমজনতা। এই পরিস্থিতিতে পিঠ বাঁচাতে উগ্র ভারত-বিরোধিতার পুরনো তাস ফের খেলেছে বর্তমান শাসকেরা।” এক দিকে সরকার সমর্থক সব অংশকে ডেকে ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন ইউনূস, পাশাপাশি এ দিন সভা করে ফের ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে বিএনপির একাংশ। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি একটি লাল শাড়িকে ভারতীয় শাড়ি দাবি করে ছুড়ে ফেলে বলেন, “স্ত্রীর কাছ থেকে চেয়ে এনেছি। পুরনো এই ভারতীয় শাড়িটি বয়কট করছি!” এক দল অনুগামী সঙ্গে সঙ্গে শাড়িটি কুড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। রিজভির এই কাণ্ডের ভিডিয়োর নীচে এক নেটিজেন মন্তব্য করেছেন, “ভারত থেকে চাল-ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ডিম, মশলা না-এলে নেতাদের অসুবিধা হয় না। হয় আমাদের।পুরনো শাড়ি পুড়িয়ে বয়কটের নাটক জমছে না।”